লেখক জাহিদুর রহমান ইমন: গত মঙ্গলবার সকাল ১০.৩০ মিনিট লোকাল শহরের নম্বর থেকে হটাৎ ফোন আসলো আমার মোবাইলে l ফোন ধরতেই বলে আর ইউ দি জারিফ ডেড ? বুজতে আর বাকি রইলোনা তার স্কুল থেকে ফোন করছে ,নিশ্চই ছেলেটার কিছু একটা হয়েছে l বললাম আমিই তার বাবা কি হয়েছে ? মহিলা টিচারটা বললো তুমার ছেলের একটু জ্বর আর সাথে মাথা ব্যথা আর খুব ভালো বোধ করছেনা !! কথাটি শুনেই আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো !! মুহূর্তের মধ্যে দুনিয়ার সবচেয়ে বড়ো দুশ্চিন্তা করোনা ভাইরাসের দুশ্চিন্তা এসে ভর করলো !! কাঁপা গলায় মহিলাটিকে বললাম আমি কি তার সাথে বলতে পারি ? বলতেই ফোনটা আমার ছেলের কাছে দিলো l তাকে বললাম বাবা কেমন ফিল করছো ? বললো তেমন কিছু না জাস্ট একটু জ্বর জ্বর লাগতেসে আর মাথা ব্যথা !! হয়তো বুজতে পারছে আমার মানসিক অবস্থা তাই এইভাবে বলছে l তাকে বললাম আমি তুমাকে নিতে আসছি ৫ মিনিটের ভেতর l এই বলে ফোনটা রেখে মনে হচ্ছিলো আমি নিঃশাস নিতে পারছিলামনা, তাছাড়া হাতপা কাঁপা শুরু করছে !! এই অবস্থায় ড্রাইভিং করাটাও অনেক রিস্কি l তারপরেও বুকে সাহস রেখে গেলাম আনতে l ড্রাইভ যখন করছিলাম তখন আমার হাত পা কাঁপছিলো !! দো চোঁখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিলো !!
মাত্র ৫ মিনিটের ড্রাইভ আমার বাসা থেকে স্কুল l মনে হইসিলো ৫ ঘন্টা !! যাইহোক স্কুলে পৌছাইলাম l ছেলেটা আমাকে দেখে বলে ডোন্ট ওরি আব্বা আই এম ফাইন !! বাসায় এসেই হট লাইনে এ ফোন দিলাম, দীর্ঘ ১ ঘণ্টা অপেক্ষার পড় ওরা ধরলো ,অনেক প্রশ্ন করে বললো তুমার ছেলের করোনা ভাইরাসের সিনড্রোম না,এটা জাস্ট নরমাল ফ্লু !! ১২ ঘন্টা অবসারভেশনে রাখতে বলছে সাথে আরো কিছু এডভাইস দিলো l কিছুটা শান্তি পেলাম l তার আম্মাকে ফোন দিলাম l সেও আসলো l সারারাত তাকে পর্যবেক্ষনে রাখলাম,সকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম !! ওরা সব পরীক্ষা করে বললো তেমন কিছু না l এক সপ্তাহ অব্জারবেশনে রাখতে বললো !! আজকে রবিবার প্রায় ছয়দিন !! একেকটা রাত গেছে অনেক দীর্ঘ ,আর দুনিয়ার সব দুশ্চিন্তা এসে ভর করতো !! একটা অপরাধবোধ কাজ করতো, মনে হইতো আমি অথবা আমার বৌয়ের মাধ্যমে মনে হয় আমার ছেলেটার করোনা ভাইরাস হইসে !! কারণ দুজেনই পাবলিক সার্ভিসে এ কাজ করি !! বৌ কাজ করে লন্ডনের একটি স্পেশালিস্ট হসপিটালে সিনিয়র প্যাথলজিস্ট হিসেবে ,যেখানে ঐসব ব্লাড টেস্ট ও করা হয় !! আর আমি কাজ করি রেলওয়েতে ,যেখানে প্রত্যেকদিন কত মানুষ আশা যাওয়া করে l তাই আমাদের এই ভাইরাস হওয়ার চান্স বেশি l আল্লাহ রক্ষা করনেওয়ালা l যাইহোক ছেলেটাএখন অনেকটা সুস্থ, যদিও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি !! মহান আল্লাহ হয়তো তাকে সুস্থ করে দিবেন l
সন্তানদের অসুখ বিসুখে বাবা মার মনের অবস্থা যে কি হয় তার উপরে এরকম করোনা ভাইরাসের মহামারীর সময় যদি হয় কষ্টের অনুভুতিটা কতটা ভয়ঙ্কর হয় ছেলেটার জ্বর না হলে বুঝতামনা l
অনেক কিছু থাকার পরেও নিজেকে মাঝে মাঝে অসহায় মনে হয় l সামান্য এক করোনা ভাইরাসের কাছে জগতের সকল মানুষ আমরা কত অসহায় l কি ভয়ঙ্কর পরিস্তিতি বিশেষ করে ইউরোপ এ l আমরা এক চরম ভয়ংকর পরিস্তিতির মধ্যে আছি l মানুষের মধ্যে এতো আতংক আর উৎকণ্ঠা আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে দেখিনি !!
ইংলেন্ডের পরিস্তিতি দিনের পর দিন মারাত্মক অবনতির দিকে যাচ্ছে l দুই সপ্তাহে ১২০০ জন আক্রান্ত, মারা গেছে এ পর্যন্ত ২৫ জন!! সরকার সব ধরণের পাবলিক সমাবেশ , ফুটবল ম্যাচ সব বন্ধ করে দিয়েছে !! হয়তো দুএকদিনের ভেতর সব স্কুল কলেজ বন্ধ করে দিবে !! হয়তো ইতালি বা ফ্রান্সের মতো সারা দেশি কার্ফু দিয়ে দিবে!!
মানুষ আগাম সব জিনিসপত্র কিনে স্টক করে রাখছে !! সুপার মার্কেট সব খালি , অনেকেই তার দরকারি জিনিসপত্র পাচ্ছেনা !! সবার আচরণ দেখে মনে হচ্ছে খুব কাছেই বোধহয় দুনিয়াতে কিছু একটা ঘটবে l
হয়তো রাব্বুল আলামিন ভালো জানেন তিনি কেন এই রোগ দিয়েছেন !! এবং ফানা করার মালিক ও তিনিই !! মহান আল্লার কাছে এটাই চাওয়া আল্লাহ যেন জগতের সকল মানুষকে মহামারী,প্রাণঘাতী এই সংক্রমণ ভাইরাস থেকে বাঁচান ।
লেখক:জাহিদুর রহমান ইমন,লন্ডন,ইংল্যান্ড ।